অবশেষে নিমতিতা রাজবাড়িকে অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিল পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন। বুধবার হেরিটেজ কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এ কথা নানানো হয়েছে।রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুশি ওই রাজবাড়ির উত্তরাধিকারী রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। তিনি এবং তার দাদা সোমেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বর্তমানে কলকাতায় রয়েছেন। নো অবজ়েকশন জানিয়ে তারাও রাজ্য সরকারের কাছে ওই রাজবাড়িকে হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের আবেদন জানিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগেই মুখ্যমন্ত্রীর কালিঘাটের বাড়ি গিয়ে জানিয়ে এসেছিলাম। এত দিন পরে হলেও তার সরকারি স্বীকৃতি মেলায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি সকলেই। ২৩ মে নোটিফিকেশন জারি করেছে রাজ্য সরকার।’’
১৫৭ বছরের প্রাচীন এই রাজবাড়ি।ছাদ ভেঙে পড়ছে। খসে পড়ছে দেওয়ালের ইট। নিমতিতায় গঙ্গা পাড়ের বিশাল জমিদার বাড়ি জুড়ে শুধু আগাছার জঙ্গল। ভেঙে পড়েছে ঠাকুর দালান। এই দালান বাড়িতেই এক সময় সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘরের শুটিং চলেছে দিনের পর দিন। দীর্ঘ দিন এই ঠাকুর বাড়ির দালানেই কাটিয়েছেন ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর।বহু ইতিহাসের সাক্ষী সেই নিমতিতা রাজবাড়িকে হেরিটেজ ভবন হিসেবে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা এই এলাকাকে পর্যটনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিক খুলে দেবে। গত ১৭ মার্চ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের ওএসডি বাসুদেব মালিকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল ঘুরে দেখে যান নিমতিতা রাজবাড়িটি। শমসেরগঞ্জের নিমতিতার শেরপুর মৌজায় ১.২২ একর জমির উপর গড়া এই ভবনের প্রতিটি এলাকা ঘুরে দেখে যান তাঁরা।
স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকর আলি বলেন, “বহু দিন থেকে চেষ্টা চলছিল। রাজবাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণায় নিমতিতা জেলার একটি ভাল পর্যটন কেন্দ্রও হয়ে উঠবে।”
রাজবাড়ির অন্যতম উত্তরসূরি রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “আমরাও চেয়েছিলাম এটিকে হেরিটেজ ভবন হিসেবে ঘোষণা করে এর উপযুক্ত সংরক্ষণ করুন হেরিটেজ কমিশন। তবে শুধু ঘোষণা করলেই তো হবে না, হেরিটেজ ভবন হিসেবে সুরক্ষা দিয়েই ভবনের সংস্কার ও সংরক্ষণ করতে হবে। সব রকম সহযোগিতা করা হবে পরিবারের পক্ষ থেকে।”
তিনি জানান, ১২৭২ বাংলা সন নাগাদ গৌরসুন্দর চৌধুরী তাঁর ভাই দ্বারকানাথ চৌধুরীর সঙ্গে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের আওতায় নিমতিতা এস্টেট নামে জমিদারি স্থাপন করেন। তখনই নির্মিত হয় এই ভবন। দ্বারকানাথের বড় ছেলে মহেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী কলকাতার নাট্য সমাজে পরিচিত ছিলেন। তিনি নিমতিতা হিন্দু থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে কলকাতার স্টার থিয়েটারের সমতুল্য একটি স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ স্থাপন করেন সেখানে। কবি নজরুল ইসলামও এসেছেন সে বাড়িতে।
Source: Anandabazar